টাক্স পেঙ্গুইনলিনাক্স বা গ্নু/লিনাক্স (ইংরেজি: GNU/Linux) বলতে লিনাক্স কার্নেলের সাথে বিশেষত গ্নু ও অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে প্যাকেজ করা অপারেটিং সিস্টেমের একটি পরিবারকে বুঝায়। সাধারণত, ডেস্কটপ ও সার্ভার দু’ধরনের ব্যবহারের জন্যেই লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো নামে একটি আকারে প্যাকেজকৃত থাকে। একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনকে বোঝানোর উপাদানই হলো এর কার্নেল – লিনাক্স কার্নেল,[৬] যেটি একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল, যা লিনাস টরভল্ডস ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখে প্রথম প্রকাশ করেন। [৭][৮][৯] অনেক লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনই লিনাক্স শব্দটি তাদের অপারেটিং সিস্টেমের নামের সাথে ব্যবহার করে এবং ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন গ্নু/লিনাক্স শব্দটি এ অপারেটিং সিস্টেম পরিবারকে বুঝাতেই ব্যবহার করে।

লিনাক্স মূলত ইন্টেল এক্স৮৬ স্থাপত্যের(আর্কিটেকচার) উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য উন্নয়ন করা হলেও, বর্তমানে এটি অন্য যেকোন অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে বেশি প্ল্যাটফর্মে পোর্ট করা হয়েছে। [১০] স্মার্টফোন জগতে লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্যের কারণে, বর্তমানের অন্য সব অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে লিনাক্সের সবচেয়ে বড় ইন্সটল-ভিত তৈরি হয়েছে।[১১] লিনাক্স সার্ভার এবং অন্যান্য বড় আইরন সিস্টেম, যেমন মেইনফ্রেম কম্পিউটার, এবং বৃহত্তর ৫০০ সুপারকম্পিউটারে ব্যবহৃত একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম (লিনাক্স ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে, অন্য সব প্রতিযোগীদের এ বাজার ধীরে ধীরে সরিয়ে দিচ্ছে)।[১২][১৩] প্রায় ২.৩% ডেস্কটপ কম্পিউটারে বর্তমানে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়। [১৪][১৫] লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম চালিত ক্রোমবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কে-১৩ শিক্ষার বাজারে গুরুত্বারোপ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ ডলারের নিচের নোটবুক বিক্রির ২০% ক্রোমবুকই প্রতিনিধিত্ব করে। [১৬] লিনাক্স গ্রত্থিত সিস্টেম-ডিভাইসগুলোতেও অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে টিভো এবং অনুরূপ ডিভিআর ডিভাইস, রাউটার, সুবিধা স্বয়ংক্রিয়করণ নিয়ন্ত্রণ, টিভি, ভিডিও গেম কনসোল এবং স্মার্টওয়াচ অন্তর্ভুক্ত। অনেক স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রোতে চলে।[১৭]

লিনাক্সকে মুক্ত সোর্সমুক্ত সফটওয়্যার ধারার একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য স্বত্ত্ব-সংরক্ষিত অপারেটিং সিস্টেম যেমন উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস হতে লিনাক্স বিভিন্নভাবে আলাদা। লিনাক্সের অন্তর্নিহিত সোর্স কোড যে কেউ গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স মোতাবেক বাধাহীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন, এর উন্নতিসাধন করতে পারেন, এমনকি পুনর্বিতরণও করতে পারেন।

একেবারে ঠিকভাবে বলতে গেলে, লিনাক্স বলতে শুধু লিনাক্স কার্নেলকেই বোঝায়। তবে যেসব ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এবং মূলত গ্নু (ও অন্যান্য) প্রকল্পের কোড সংগ্রহ (লাইব্রেরি) ও হাতিয়ার (টুলস) ওই কার্নেলের সাথে যুক্ত করে বানানো হয়েছে, সাধারণভাবে সেসব অপারেটিং সিস্টেমকে লিনাক্স হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

আরও ব্যাপক অর্থে একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বলতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ও এর সাথে সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণের অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যারের সমষ্টিকে বোঝায়। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সহজেই কম্পিউটারে সংস্থাপন (ইন্সটল) ও হালনাগাদ (আপডেট) করা যায়।

কিছু ডেস্কটপ পরিবেশ যেমন গ্নোম, কেডিই প্লাজমা ও এক্সএফসিই সাধারণত কেবল লিনাক্সের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হলেও এগুলো অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও (যেমন ফ্রিবিএসডি-তে) ব্যবহৃত হয়।

প্রাথমিকভাবে কেবল কিছু উৎসাহী ব্যক্তিই মূলত লিনাক্স ব্যবহার ও এর উন্নতিসাধন করতেন। এখন বড় বড় কর্পোরেশন যেমন ডেল, আইবিএম, সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স, [[হিউলেট-প্যাকার্ড]], নভেলসহ আরও অনেক বড় কোম্পানি সার্ভারে ব্যবহারের জন্যে লিনাক্সকে বেছে নিয়েছে। ডেস্কটপ বাজারেও লিনাক্সের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। লিনাক্স বিশেষজ্ঞ ও লিনাক্স সমর্থকদের মতে লিনাক্সের এই উত্থানের পেছনে কারণ লিনাক্স সস্তা, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে হয় না, অর্থাৎ এটি বিক্রেতা-অধীন নয়।

লিনাক্স প্রাথমিকভাবে ইন্টেল ৩৮৬ মাইক্রোপ্রসেসরের জন্য তৈরি করা হলেও এখন এটি বর্তমানের সব জনপ্রিয় (এমনকি অনেক পুরনো ও বিরল) কম্পিউটার স্থাপত্যের অধীনে কাজ করে। গ্রত্থিত ব্যবস্থা(এম্বেডেড সিস্টেম), যেমন মোবাইল ফোন, ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ডার, ইত্যাদি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, এমনকি সুপারকম্পিউটার – সব জায়গাতেই এখন লিনাক্স ব্যবহৃত হয়।

শেয়ার করুন