হার্ড ডিস্ক (এইচডিডি), হার্ড ডিস্ক, হার্ড ড্রাইভ বা ফিক্সড ড্রাইভ হলো ডাটা সংরক্ষণের যন্ত্র যা তথ্য জমা এবং পরবর্তী সময়ে পড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্কে সমকেন্দ্রিক একাধিক চাকতি থাকে। একে প্লেটারস বলে। এগুলো চৌম্বকীয় ধাতু দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। প্লেটারসগুলো চৌম্বকীয় হেডস বা মাথার সাথে জোড়া দেয়া থাকে। এগুলোর সাথে আর একটি সক্রিয় একচুয়েটর আর্ম বা হাত থাকে। এই একচুয়েটর হাত প্লেটারগুলোর উপরিভাগ থেকে তথ্য পড়তে এবং তথ্য জমা করতে ব্যবহৃত হয়[২]। ডাটাগুলো ড্রাইভে স্থানান্তরিত হয় র্যানডম-একসেস প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে। এর মানে হল ডাটা যখন ড্রাইভে রাখা হয় এগুলো পর পর সাজানো হয় না বরং যেকোন খালি জায়গায় ডাটা জমা করা হয়। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ কম্পিউটার বন্ধ করার পরও ডাটা সংরক্ষন করে রাখে।
আইবিএম সর্ব প্রথম ১৯৫৬[৩] সালে হার্ড ডিস্ক উদ্ভাবন করে এবং ১৯৬০ দশকে সাধারণ কম্পিউটারের দ্বিতীয় সংরক্ষন মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রতিনিয়ত এটির উন্নয়নের ফলে আজকের দিনের সার্ভার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে এর ব্যবহার লক্ষনীয়। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণের স্থায়ী (non-volatile) ব্যবস্থা হিসাবে হার্ড ডিস্ক ব্যবহৃত হয়। হার্ড ডিস্ক ছাড়াও বর্তমানে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার, মিউজিক প্লেয়ার প্রভৃতি যন্ত্রে হার্ড ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। ২০০টি কোম্পানীরও বেশি কোম্পানী এই ড্রাইভ বিভিন্ন সময় প্রস্তুত করেছে। বর্তমানে এটি প্রস্তুত করছে বেশকিছু খ্যাতিমান কোম্পানী যাদের মধ্যে সিগেট, তোশিবা এবং ওয়েষ্টার্ন ডিজিটাল উল্লেখ্যযোগ্য। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপি ডিস্ক স্টোরেজের আয় ছিল $৩২ বিলিয়ন, এটি ২০১২ সাল থেকে ৩% কম ছিল।[৪]
একটি হার্ড ড্রাইভের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল এর ধারণক্ষমতা ও কার্যকারিতা। ধারণক্ষমতাকে উল্লেখ্য করা হয় ১০০০ ইউনিটের উপসর্গ দিয়ে যেমন ১ টেরাবাইট ড্রাইভের ধারণক্ষমতা হল ১০০০ গিগাবাইট। এই ধারনক্ষমতার সবটাই ব্যবহারকারীর জন্য পুরোপুরি থাকে না কারণ ফাইল সিস্টেম এবং কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও অভ্যন্তরীন বাড়তি জায়গা ব্যবহার করা হয় ভুল সংশোধন ও পুনরুদ্ধার কাজের জন্য। কার্যকারিতাকে বোঝানো হয় হার্ড ড্রাইভের একসেস টাইম ও ল্যাটেন্সি বৈশিষ্ট্যের উপর। একসেস টাইম হল কতটুকু সময়ে একটি হেড কোন নির্দিষ্ট ট্র্যাক বা সিলিন্ডারের যায় এবং ল্যাটেন্সি হল একটি সেক্টর কত দ্রুত হেডের নিচে আসে সেই সময়ের সমষ্টি। ল্যাটেন্সির ব্যাপারটি হার্ড ড্রাইভের রোটেশনাল স্পিড যা রিভোলুশন পার মিনিট দিয়ে মাপা হয় তার সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও হার্ড ড্রাইভে কত গতিতে ডাটা স্থানান্তর (ডাটা রেট) হয় সেটিও অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়।
আধুনিক হার্ড ড্রাইভের দুটি গঠন প্রায়শই দেখা যায়। ৩.৫ ইঞ্চি এবং ২.৫ ইঞ্চি। ৩.৫ ইঞ্চি মাপের ড্রাইভ ডেস্কটপের জন্য এবং ২.৫ ইঞ্চি সাধারণত ল্যাপটপে দেখা যায়। হার্ড ড্রাইভগুলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারফেস ক্যাবল যেমন পাটা, সাটা, ইউএসবি বা সিরিয়াল এটাচড এসসিএসআই ক্যাবল দ্বারা সংযুক্ত থাকে। শুরুর দিকের হার্ড ডিস্ক গুলো ছিলো অপসারনযোগ্য মাধ্যম, কিন্তু বর্তমানের হার্ড ডিস্ক গুলো সাধারণত ধাতব বাক্সে আবদ্ধ থাকে।
২০১৫ সালের তথ্যমতে, হার্ড ড্রাইভের প্রধান প্রতিযোগী প্রযুক্তি হল সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি) প্রযু্ক্তিতে আসা ফ্ল্যাশ মেমোরি। এগুলোর রয়েছে উচ্চ গতির ডাটা স্থানান্তর ক্ষমতা এবং উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা। আর এগুলোর ল্যাটেন্সি টাইম ও একসেস টাইম কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও হার্ড ড্রাইভগুলো এখনও কম দাম এবং ডিভাইস প্রতি সংরক্ষন ক্ষমতার[৭][৮] দিক প্রভাবশালী হয়ে আছে গৌণ তথ্য সংরক্ষনের ব্যবস্থা হিসেবে। আবার এসএসডিগুলো যেখানে দ্রুতগতি, বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্নভাবে প্রয়োজন সেখানে প্রথমেই বিবেচনা করা হয়।